সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা

আবছার উদ্দিন অলি# চট্টগ্রাম মহানগরীর নিমতলা এলাকায় বসবাসকারী হাজী ইকবাল হোসেনের প্রশ্ন? নগরবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কখন মুক্তি পাবে? এই প্রশ্ন শুধু ইকবাল হোসেনের নয়, এই প্রশ্ন পুরো চট্টগ্রামবাসীর। বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও জলাবদ্ধতার কোন সুফল মিলছে না। নগরবাসী শুধু স্বপ্নই দেখে যাচ্ছে। কথা ও কাজের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে কয়েকদিনে বর্ষার টানা বৃষ্টি আর রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশায় সৃষ্টি হয়েছে জনদূর্ভোগ। সিলেটে বন্যা এবং নতুন করে করোনা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই দূর্ভোগ নগরবাসীর কাছে একটি বাড়তি ঝামেলা।
এদিকে টানা বর্ষণে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কার পাশাপাশি বন্দরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই টানা বৃষ্টিতে জনদূর্ভোগ তৈরি হয়েছে। নগরীর আগ্রাবাদ, চকবাজার, মুরাদপুর, বাকলিয়া, নাসিরাবাদ, ২নং গেইট, ডি.সি রোড, অক্সিজেন মোড়, হালিশহর, রশিদ বিল্ডিং, গোসাইল ডাঙ্গা, পাঠানটুলী, মোগলটুলী, মাদারবাড়ী, বাকলিয়া, জিইসি’র মোড়, প্রবর্তক মোড়, বহদ্দারহাট সহ গতকালের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে করে কর্মজীবি মানুষ দূর্ভোগে পড়েছে। চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমেদ বলেন- এই এলাকায় ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলাম না। আর পাবো কিনা সেটাও জানিনা।
নগরীর পিসি রোড মানে দু:সহ যন্ত্রণার আরেক নাম। এই রাস্তা মানে বুক ভরা দু:খ আর কান্না। নগরের পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের অলংকার থেকে নিমতলা পর্যন্ত মাত্র পাঁচ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ ৩ বছরেরও বেশি সময়ে শেষ হয়নি। এসময়ে কাজের গড় অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। ১৭০ কোটি ১২ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৫ টাকায় সড়কটির ছয় লেনে সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে। সংস্কার কাজের তদারককারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ইতোমধ্যে দফায় দফায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা পত্রও দিয়েছে।
সিটি গভর্ণেন্স প্রজেক্টের (ব্যাচ-২) আওতায় পিসি রোডের উন্নয়ন কাজে অর্থায়ন করছে জাইকা। তবে সড়কটির সংস্কারে ঠিকাদার নিয়োগ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলমান উন্নয়ন কাজের মনিটরিং করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। পিসি রোডের বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন- এই রোডে কোনো গাড়ী আসতে এবং যেতে চায়না। দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রাস্তায় কাজ চললেও এখনও পর্যন্ত শেষ হওয়ার নাম গন্ধও নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর ভাড়া বাসা-বাড়ীসহ সবকিছুতেই লোকসান পোহাতে হচ্ছে। এখানে কেউ আসতে চায়না। এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যার সমাধান কি হবে? বেঁচে থাকতে দেখে যেতে পারবো না?
আগ্রাবাদ মৌলভী পাড়ার আলহাজ¦ কবির মোহাম্মদ বলেন- সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাচ্ছে না এবং এই অভিশাপ থেকে কখন মুক্তি পাবে তারই নিশ্চয়তা নেই।

আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকায় বসবাসকারী আবদুর রহিম বলেন- প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা খরচ করে এখানে বিল্ডিং করেছি, কিন্তু বছরে এগার মাসেই এখানে পানি থাকে। যার কারণে বিল্ডিং পেলে বাইরে গিয়ে বাসা ভাড়া করে থাকছি। এর চেয়ে আর কঠিন বাস্তবতা কি হতে পারে। বর্ষার বৃষ্টি আর রাস্তাঘাটের বেহাল দশা একেবারেই কঠিন অবস্থায় ফেলেছে নগরবাসীকে।

বর্ষায় উন্নয়ন কর্মকান্ড গতি হারাবে কিনা এমনটি সংশয় দেখা দিয়েছে। এভাবে জনদূর্ভোগ আর কতদিন। ওয়াসার রাস্তা খুড়াখুড়ি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইনের মেরামত কাজ এবং সিটি কর্পোরেশনের নালা-নর্দমার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নগরে সব রাস্তায় একধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় বাস-ট্রাক চলাচলে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি মানুষ হেটে যাওয়াও এখন দায় হয়ে পড়েছে।

0Shares

নিউজ খুজুন