বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশ সেবার সুযোগ পেলে আমরা সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থায় হাত দিবো। আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করবো যাতে শিক্ষার্থীরা কলেজ বিশ^বিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট এর সাথে একটা কর্মও পেয়ে যাবে। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা এমন করে রাখা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীরা জাতিকে কিছু দিতে পারে না। নৈতিক শিক্ষার অভাবে তারা জাতিকে কিছু দেওয়ার পরিবর্তে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে।
৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ার ওসমানী পৌর স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত বিরাট জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা জামায়াত এ জনসভার আয়োজন করে। এর আগে সকাল ৯টায় মুফতি শাইখ ইউসুফ সাকিম আল আযহারীর পবিত্র কালামে হাকিম থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসাইন ও জেলা সেক্রেটারি হাফিজুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চল পরিচালক সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রƒীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, এডভোকেট মশিউল আলম। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাকার সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠি, শিহরণ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ, ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক সংসদ ও শীতলক্ষা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ।
বক্তব্যের শুরুতেই আমীরে জামায়াত বলেন, এই নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমার আরও অনেক আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন আমীর ছিলেন। সেই আমীরের নামে এই নারায়ণগঞ্জের একজন দুর্ধর্ষ লোক মহাসড়কের পাশে ৭২ ফুট লম্বা একটা ব্যানার টানিয়ে লিখে রেখেছিল এই লোকের নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ নিষেধ। জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে একটা সভায় বলে রেখেছিলেন, এসপি সাহেব আমার নামে একটা অগ্রীম মামলা দায়ের করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আযমকে খুন করবো। আলহামদুলিল্লাহ স্বৈরাচারের জুলুমের শিকার হয়ে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু গডফাদারের সুযোগ হয়নি তাকে সরাসরি খুন করতে। অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকে তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের মাটিতে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যে ভাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন আজকে তিনি কোথায়? তিনি কি নারায়ণগঞ্জে আছেন? মাঠ থেকে জবাব আসে ‘না’। তিনি বলেন, দম্ভ-অহংকার করতে নাই।
আওয়ামী লীগ জাতিকে বিভক্ত করে রেখেছিল অভিযোগ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রথমেই তারা পার্বত্যবাসীকে উস্কানি দিলো। ৫৩টা বছর জাতিকে টুকরা টুকরা করে রাখা হয়েছে। তাদের বলা হলো বাংলাদেশে যারা বসবাস করে তারা বাঙালি। এখানে যারা থাকবে বাঙালি হয়ে থাকতে হবে। পার্বত্যবাসী তার একথায় প্রতিবাদ করলো। অস্থির হয়ে উঠলো। তারা বললো আমরা বাঙালি নই, আমরা পাহাড়ি। এভাবে প্রথমেই একটা বিভক্তি টেনে দিলেন। সেই পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত হলো আজ পর্যন্ত আর শান্ত হলো না। শান্তি বাহিনী নামে একটা বাহিনী গঠন হলো। তাদের হাতে ১০ হাজার সামরিক কর্মকর্তা এবং সৈনিক নিহত হলো। এরপর তারা বলা শুরু করলো স্বাধীনতার পক্ষের একদল বিপক্ষের আরেক দল।
তিনি সকল ধর্মের লোকজনের উদ্দেশে বলেন, সংবিধান তাকে যে কয়টা মৌলিক অধিকার দিয়েছে সব কয়টাই এই দেশে নিশ্চিত হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব হবে। এটা কারো দয়ার দান নয়। এটা তার বাঁচার অধিকার, সম্মান পাওয়ার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার। সব অধিকার তার হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই হবে স্বাধীনতার মূল চেতনা। এ সমাজটা হবে বৈষম্যহীন ও মানবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগ সবকিছু ধ্বংস করেছে। সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে তারা নষ্ট করেছে। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম তারা পালিয়ে গিয়েছে, দেশ শান্তিতে থাকবে। কিন্তু না পালিয়ে গিয়েও উস্কানি দিচ্ছে। কয়েকদিন আগে তারা দিয়েছিলেন। হাজার হাজার মানুষ খুন হলো। অনেক মানুষ হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে, অথচ এমন সময় তারা আবার উস্কানি দিলেন। সুতরাং উস্কানির কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার দায় উস্কানিদাতাদের নিতে হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে গরীব থাকবে না ইনশা আল্লাহ। যদি দেশের মানুষের ভালবাসা এবং সমর্থন পাই, তাহলে সর্বপ্রথম হাত দিবো শিক্ষা ব্যবস্থায়। কারণ আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে কেরানিগিরির শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের শিক্ষা বিজ্ঞানী তৈরির শিক্ষা নয়। এ কারণে আমাদের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েট। সেখান থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষিত মানুষ বের হচ্ছেন। তারা জাতিকে কিছু দিতে পারে না। ভাল হওয়ার সুযোগও দিতে পারে না। তাদের নৈতিক শিক্ষা না থাকার কারণে জাতির পকেটে আস্তে করে হাত ঢুকিয়ে দেয়। তারা পকেট খালি করে লুটপাট করে, ব্যাংক ডাকাতি করে সমস্ত অর্থ তারা বিদেশে পাচার করে। সাড়ে ১৫ বছরে তারা ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সরকারের কাছে দাবি পাচারকৃত সকল টাকা ফেরত আনতে হবে। ২৬ লাখ মানুষের নগরী নারায়ণগঞ্জ কেন বঞ্চিত? বঞ্চিত এ কারণে ছিল যে, গডফাদারদের ধান্ধা ছিল জমিদারি টিকিয়ে রাখা আর গডফাদারগিরি করা।
তিনি বলেন, আগামি দিনে আমাদের সন্তানেরা যখন শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হবে; একইসাথে তাদের হাতে যেমন সার্টিফিকেট আসবে, তেমনি তাদের হাতে উপযুক্ত কাজও চলে আসবে ইনশা আল্লাহ। একটা সন্তানকেও বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকতে হবে না। ডা. শফিকুর রহমান উদাহরণ টেনে বলেন, পথ শিশু নামের শব্দটি আমরা শুনতে চাই না। যে শিশু এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছে তাকে আমরা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।
দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনটি শিল্পের অগ্রাধিকারের কথা জানিয়ে বলেন, প্রথম মানব শিল্প, দ্বিতীয়টা হলো ইলেকট্রনিক মেকানিক্যাল শিল্প। আমাদের জায়গা কম; তাই জায়গা নষ্ট করবেন না। আকাশ দখল করেন। কিন্তু আমার দেশে নানাভাবে জমি নষ্ট হচ্ছে। নদীর বুকে চাষাবাদ হয়। তিন নম্বর ইন্ডাট্রি কৃষিজ ইন্ডাট্রিজ। সবশেষে সম্মান ও ভালবাসার দেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে বলেন, আমাদের সন্তানরা ন্যায়ের দেশ গড়তে চায়। দয়া করে এখানে আর চাঁদাবাজি করবেন না। দখলবাজি করবেন না। বিনয়ের সাথে বলবো। হাতজোর করে বলি এসবছেড়ে দেন। এরপরও এসব করা হলে ১৮ কোটি মানুষ অভিশাপ দিবে। আহতরা অভিশাপ দিবে। এরপরও যদি এসব কাজ অব্যাহত রাখেন, যুব সমাজকে কথা দিচ্ছি, তোমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে জামায়াত ওয়াদাবদ্ধ। আমরা একসাথে যুদ্ধ করবো। আর ভুল করা যাবে না। করতে দেওয়া যাবে না।
আমরা একটি অহিংসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। সবাই ভাইবোন হিসেবে থাকবো। সবার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিবো। সত্য ন্যায়ের পক্ষে যতক্ষণ আছি, দেশ গড়ার জন্য আপনাদের পাশে চাই। আপনাদের ভালবাসা চাই। কথা দিচ্ছি দাবি করতে হবে না। সব দাবি পূরণ করবো।