সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’র সমাবেশ পালিত।

২১ জানুয়ারি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে “জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২০ ও ভুলে ভরা নিম্নমানের পাঠ্যপুস্তক বাতিল এবং সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণের মূল্য কমানোর” -দাবিতে  সমাবেশে ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয় আজ বিকাল ৩টায়, নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিনের সভাপতিত্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রায়হান উদ্দিন, নগর শাখার সহ-সভাপতি ফারিস্তা চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রীতম বড়ুয়া।  সমাবেশে বক্তারা বলেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য, ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণ ও সংকোচনের বিরুদ্ধে তার লড়াই চালিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সকল শাসকই যখন শিক্ষানীতিকে তাদের ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তখন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে একটি একই ধারার, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, একমুখী, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতির দাবিতে তার সংগ্রাম পরিচালনা করছে। 

বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও একইভাবে একটি বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যাবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমিয়ে শিক্ষাকে ক্রমাগত বেসরকারীকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করেছে, সাধারণ জনগণের কাছে শিক্ষা পরিণত হয়েছে একটি বিলাসী পণ্যে। স্বাধীনতা পরবর্তী চট্টগ্রাম শহরে নির্মিত হয়নি নতুন কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ। অন্যদিকে খোপের মতো এলাকায় এলাকায় তৈরি হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানে নিজদের মর্জিমত বেতন ও নামে বেনামে বিভিন্ন ধরনের ফি নির্ধারন করছে কর্তৃপক্ষ। করোনাকালীন স্থবির শিক্ষাব্যাবস্থাকে করোনা পরবর্তী সময়ে ঢেলে সাজাতে পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছে সরকার। কখনো অনলাইন, কখনো ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেমের নামে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যকে আরো বাড়ানো হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এই সময় প্রাথমিকে প্রায় ১৯ ভাগ ও মাধ্যমিকে প্রায় ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ নেই, শিক্ষার্থী অনুপাতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একক দখলদারিত্ব ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তায় শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ভুলন্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ে সাম্প্রদায়িকীকরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিস্তার লাভ করছে কূপমন্ডুক মনন। বর্তমান সময়ে এসে বিভিন্ন ছুতোয় সরকার বাড়িয়ে চলেছে শিক্ষা উপকরণের দাম। নতুন বছরে সবার জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তকে বিতরণের ধোঁয়া তুলে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের, ভুলে ভরা বই। ভালো ভালো কথা যুক্ত করে নতুন শিক্ষাক্রমের নামে, শিক্ষার বিদ্যামান বৈষম্যকেই বহাল রেখেছে। বিজ্ঞান শিক্ষাকে আরো বেশী সংকুচিত করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্যকে বহাল রেখে শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন কখনো সম্ভব নয়। সমাবেশে বক্তারা, অবিলম্বে সকল প্রকার শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সকল বাণিজ্যিক-সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একই ধারার, বিজ্ঞানভিত্তিক,সেক্যুলার, বৈষম্যহীন, একমুখী, গণতান্ত্রিক শিক্ষার দাবিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয়। সমাবেশ শেষে একটি প্রাক্তন-বর্তমান পুনর্মিলনী সভা অনুষ্ঠিত হয় সংগঠন কার্যালয়ে। পুনর্মিলনী সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা কমরেড কামরুল হক মারুফ, কমরেড নাজিম উদ্দিন বাপ্পী, কমরেড সেলিম উদ্দিন, সেমিনা ইসরাত, জোবাইর বীণা, কমরেড মবিনুল হক সাব্বির, শাহেনা আক্তার, কমরেড স.ম. ইউনুস, নুরুল আরশাদ চৌধুরী, নাসিম মিনহাজ, কমরেড হেলাল উদ্দিন কবির, কমরেড আকরাম হোসেন, অলোক চক্রবর্তী, সুমিত দাশ, পার্থ প্রতীম নন্দী প্রমুখ।

0Shares

নিউজ খুজুন