শেখ হাসিনা সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল : রিজভী

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধোঁয়াশা তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়ে পতিত সরকারের মতোই তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে সবার ত্যাগ স্বীকার না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে-এমন দোদুল্যমান বক্তব্য না দিয়ে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে জাতিকে আশ্বস্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রিকশাভ্যান ও অটোচালকদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অনেকেই বলেন যে, শুধু নির্বাচন করার জন্য কি আন্দোলন করা হয়েছে? নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে। শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেননি। ক্ষমতা রক্ষার জন্য দেশকে একটি কারবালায় পরিণত করেছিলেন। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলেও জনগণের সমর্থন রয়েছে। সকল আন্দোলনকারী দল তাদের সমর্থন দিয়েছে।

১২২টি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা এখনও বেতন পাননি এবং ১৫০ গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বোনাস পাননি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সরকারের দায়িত্ব শ্রমকিদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করা। অবিলম্বে তাদের বেতন বোনাসের ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে ১৭জন রিকশাচালক জীবন দিয়েছেন। আমি তাদের বাসায় গিয়েছি। কি নিদারুণ কষ্টে তাদের পরিবারের সদস্যরা জীবন-যাপন করছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের পরিবার যেন না খেয়ে না থাকে। তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। তাদের সন্তানদের লেখা-পড়ার দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। পরিবারের সদস্য যারা চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত তাদের চাকরি দিতে হবে।

রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল। সে সময় চোর ডাকাতরা এমপি হতো। আর ভালো মানুষদের জায়গা হতো কারাগারে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার উদাহরণ। যদি দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র থাকতো তাহলে ২০১৪ সালেই বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হতেন।

ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চয়তার যখন ন্যূনতম সুযোগ পাওয়া গেছে, সেই ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই প্রকৌশলী ইশরাক মেয়র হিসেবে আদালত থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

রিজভী আরও বলেন, সে (ইশরাক) জোরজবরদস্তি করতে পারত। সে অত্যন্ত জনপ্রিয়, ১০ হাজার ২০ হাজার লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করতে পারত। করে বলত, ৫ আগস্টের পরে আমাকে ঘোষণা করা হোক। যেকোনো একটা জবরদস্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করতে পারত। সেটা তো সে করেনি। সে আইনি প্রক্রিয়ায় গেছে।

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ১৭ জন রিকশাশ্রমিক জীবন দিয়েছেন জানিয়ে অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আন্দোলনের বিজয়ের পর তাঁদের সন্তানরা যদি স্কুলের বেতন দিতে না পেরে কান্নাকাটি করে, এটা কতটা বেদনাদায়ক, তা চিন্তাও করা যায় না।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, যাঁরা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, যাঁরাই হোক না কেন, তাঁদের পরিবার যেন না খেয়ে না থাকে। তাঁদের পরিবার, পরিবারের সন্তানেরা যেন স্কুল থেকে বঞ্চিত না হয়। কলেজ থেকে বঞ্চিত না হয়। তাদের লেখাপড়া এবং পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তারা কেন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। তাদের শিক্ষা–স্বাস্থ্যব্যবস্থা—প্রতিটির দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ ।

0Shares

নিউজ খুজুন