শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল রূপান্তরের বিকল্প নেই: মোস্তাফা জব্বার

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল রূপান্তরের বিকল্প কিছু নেই। এজন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি, ডিজিটাল সংযুক্তি এবং ডিজিটাল ডিভাইসের সহজলভ্যতা।

তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশের জন্য সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এক ধাপে শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটাল করাটা কঠিন বলে আমরা এখন ব্লেন্ডেড শিক্ষার পথ ধরে হাঁটছি। দুর্গম অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ স্থাপন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত চরদ্বীপ অঞ্চলে সংযোগ দেওয়া, ৫জির উদ্বোধন, দেশে ডিজিটাল যন্ত্র উৎপাদন এবং ডিজিটাল ডিভাইস সহজলভ্য করাসহ প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত কনটেন্ট প্রস্তুত করার ফলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে না বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

বৃহ্স্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে এটুআই এর উদ্যোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, মেটা (ফেসবুক) এবং আইটিইউ আয়োজিত ইনক্লুসিভ একসেস ফর ব্ল্যান্ডেড এডুকেশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক অনলাইনে প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মেটার (ফেসবুক) গ্লোবাল হেড অব কানেক্টিভিটি অ্যান্ড একসেস পলিসি মনিকা দেশাই, আইটিইউর স্পেশাল ইনিসিয়েটিভ গিগা চিফ এলেক্স অং আলোচনায় অংশ নেন। এটুআই প্রোগ্রামের পলিসি অ্যাডভাইসার অনির চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

ডিজিটাল সংযোগকে ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যাকবোন হিসেবে উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যেসব দুর্গম অঞ্চলে বিশেষ করে দ্বীপ, চর, পার্বত্য অঞ্চল এবং হাওর এলাকা যেখানে অপটিক্যাল ফাইভার সংযোগ পৌঁছানে সম্ভব নয় সেসব অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে ডাকঘরগুলো ডিজিটাল সেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ডিজিটাল সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে ৫৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় আরও ১২ হাজার ফ্রি ওয়াইফাই জোন স্থাপনের কাজ শুরু করেছি আমরা।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে পাঠদানের লক্ষ্যে দুর্গম অঞ্চলের ৬৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ক্লাস রুম করা হচ্ছে।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠ নিশ্চিত করতে আমরা দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকায় মোবাইল সংযোগ থ্রি-জি থেকে ফোর-জিতে উন্নীত করেছি।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেট সহজলভ্য করার পাশাপাশি আমরা ডিজিটাল ডিভাইস সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে দেশে স্মার্ট ফোন কারখানা গড়ে তুলতে বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনাসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করি। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে ১৪টি মোবাইল কারখানা গড়ে ওঠেছে। এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত মোবাইল দেশের চাহিদার প্রায় ৬৩ শতাংশ পূরণ করছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের মাসিক মূল্য সর্বনিম্ন প্রতি এমবিপিএস ২৮৫ টাকায় নামানো হয়েছিলো। এখন সেটি এক দেশ এক রেট ঘোষণার পর একশো টাকারও নিচে নির্ধারণ করা হয়েছে, এর আগে ২০০৮ সালে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের মূল্য ছিলো ২৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২০০৮ সালে যেখানে আট লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলো সেটি ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে ৮ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের ব্যবহার এখন ৩ হাজার জিবিপিইস এ উন্নীত হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগা প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশ ডিজিটাল সংযুক্তি সম্প্রসারণে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে। এ সফলতার পথ ধরেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দৃঢ় প্রত্যাশা পূরণে আমরা সফল হবোই বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ফাইভ-জি প্রযুক্তি যুগে প্রবেশ করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা, আইওটি , রোবটিক্স, ব্লকচেইন ইত্যাদি প্রযুক্তির অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে ফাইভ-জি। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প ও বাণিজ্যে বিস্ময়কর পরিবর্তন সূচিত হবে। এর ফলে ঢাকায় বসে চিকিৎসক ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্গম অঞ্চলের রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করতে পারবেন বলে দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি মেটাক ও আইটিইউকে দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তুলতে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি জানান, যে সরকার ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি মেটা ও আইটিইউকে এ বিষয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানান। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী দেশের ডিজিটাল সংযুক্তির বিস্তার তুলে ধরে ফেসবুককে কেবল টেক্সট ব্রাউজিং ফ্রি না করে ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টও ফ্রি করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্টরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিষয়ভিত্তিক অগ্রগতি ও নীতিগত বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলোকপাত করেন।

0Shares

নিউজ খুজুন