দৈনিক নিউজ চাটগাঁ ডেক্স : পটিয়া উপজেলা ধলঘাট ইউনিয়নের তেকোটা গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে পিতা মনোহর আলী ও মাতা ছবুরা খাতুনের রত্নগর্ভে ১৯৫৫ সালের ১৯ মে জন্মগ্রহণ করে বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ।
স্থানীয় গৈড়লা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং গৈড়লা কে.পি, উচ্চ বিদ্যালয় হতে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৭২ সালে পটিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ‘৭৪ সালে এইচ.এস.সি. পাশ করেন। এইচ.এস.সি, পাশের পর পটিয়া কলেজেই ডিগ্রীতে ভর্তি হন। ১৯৭৭ সালে ডিগ্রী পাশ করেন। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ (রাষ্ট্র বিজ্ঞানে) ভর্তি হন ১৯৮০ সালে এম.এ পাশ করেন। এম.এ পাশ করেই তিনি চট্টগ্রাম আইন কলেজে ভর্তি হন এবং আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। আইন কলেজে পড়াশোনা শেষ করেই অন্য কোন পেশায় না গিয়ে তিনি চাকুরী করার সিদ্ধান্ত নেন।
সমাজহিতৈষী বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ পড়াশোনা শেষ করে তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে চাকুরী গ্রহণ করেন সেখানে দুই বছর চাকুরী করার পর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চাকুরী গ্রহণ করেন সেখানে ১৯৮৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকুরী করার পর কাস্টমসের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ১৯৮৩ সালেই বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে যুগ্ম-পরিচালক পদ হতে অবসর গ্রহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনীর সদস্য। তিনি পাক বাহিনীর সাথে গেরিলা বাহিনীর সাথে সংগঠিত সকল সম্মূখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে গোপন কমিউনিস্ট পার্টি সাথে যুক্ত হন মেম্বারশীপ পান এবং সমাজতন্ত্রের মূল মন্ত্রে উদ্বোদ্ধ হয়ে সক্রিয়ভাবে পার্টি কাজে অংশগ্রহণ করেন। ১ম যুদ্ধ-সরাসরি যুদ্ধ হয় কেলিশহর গোপাপাড়া, ২য় যুদ্ধ-ধলঘাট রেল স্টেশন দখলের যুদ্ধ, বোয়ালখালী কালাইয়ার হাট রাজাকার ক্যাম্প দখলের যুদ্ধ, ৩য় যুদ্ধ চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে ১৮ নভেম্বর ইন্দ্রপোল দখল ও সেতু ধ্বংস করে দেয়া, ৪র্থ সম্মুখ যুদ্ধ-৯ ডিসেম্বর গৈড়লার টেকে ঐতিহাসিক সম্মুখ যুদ্ধ সেই যুদ্ধে পাক বাহিনীর ১৪ জন নিহত হয় এবং শতাধিক আত্মসমার্পন করেন বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসস্থ দখলে আসে। ১৩ ডিসেম্বর পটিয়া থানায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ পটিয়ার গৈড়লার টেক নামক স্থানে গেরিলা বাহিনী সাথে পাক বাহিনীর দিন ব্যাপী যুদ্ধে পাক বাহিনীর পরাজিত হয়। হানাদার বাহিনীর ১৪ জন নিহত হওয়ার পর পাক বাহিনীর সাথে তাদের সকল সহযোগী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
মূলত: ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা হানাদার মুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে, গেরিলা বাহিনীর উদ্যোগে কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে চালতাছড়ি নামক স্থানে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করা হয়, সেখানে শতশত যুবককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমাদের গেরিলা বাহিনী ছিল “মুক্তিযুদ্ধকালীন-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন” বিশেষ গেরিলা বাহিনী।
বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ পারিবারিক জীবনে বোয়ালখালী ঘোষখীল গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবার বাংলাদেশ ডাক বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল লতিফের ১ম কন্যা জেসমিন আরা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। জেসমিন আরা বেগম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে এম.এস পাশ করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার। বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ চার কন্যা সন্তানের জনক।
বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ প্রথম সন্তান প্রকৌশলী সাবরিনা বিনতে আহমদ সাকী একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকুরীতে আছে। তিনি ঢাকা বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেন।
দ্বিতীয় সন্তান ডাক্তার সায়মুনা জেসমিন পিংকি, এম.বিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), চট্টগ্রাম পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ কর্মরত আছেন। তৃতীয় সন্তানে প্রকৌশলী ইফফাত বিনতে ফজল (ইমু) আমেরিকান মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি হতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার এম.এস করে ১ম শ্রেণিতে ১ম হয়েছে এবং বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত আছেন। চতুর্থ সন্তানে ফারিয়া জেসমিন লিমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজম্যান্টে অনার্স করছেন।
তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম বাকলিয়ায় ডিসি রোড চকবাজার চট্টগ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। তিনি দৈনিক নিউজ চাটগাঁ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক সহ চট্টগ্রামে বহু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।