লেখক : কবি উজ্জ্বল চক্রবর্ত্তী (সংগ্রাম) – মাঝি পাড়ার মধ্যে একজন ভাড়াটিয়া থাকত। যার টাইটেল ছিল তালুকদার। তালুকদার মানে অনেকগুলি মৌজার মালিক, মানে বৃটিশ আমলের জমিদার। আগেকার দিনে জমিদারদের একস্থান থেকে অন্যস্থানে ভিটে মাটি স্থানান্তর করার সময় ব্রাহ্মণ, ধোপা ও নাপিত যেতো তাদের সঙ্গে। সেই রকম একজন ছিলেন “কাজল তালুকদার” তাঁর বাড়ী ছিল কক্সবাজারের আদিনাথ। তাঁর বাবার ছিল বিরাট জমিদারী। এই কাজল তালুকদার হচ্ছেন জমিদারের সর্ব কণিষ্ঠ পুত্র। এই পুত্র যখন তাঁর বাড়ীর কাজের মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করে তখন তাঁর বাবা তাঁকে ত্যাজ্য পুত্র করেন। তখন কাজল তাঁর বৌ নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে। সেই কষ্টে জীবন-যাপন করতে লাগল। কিছুদিন পর তাঁর একটি পুত্র সন্তান হয়। সেই পুত্র সন্তানটি ছোট বেলায় ভালই ছিল। কিন্তু যখন সেই হাঁটতে শিখল তখন একদিন বেহুশ হয়ে পড়ে যায় এবং তার হাত-পা কাঁপতে থাকে। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তার কয়েকটি টেষ্ট করতে বলে। টেষ্টা করার পরে ধরা পড়ল ছেলেটি মৃগি রোগ আছে। ছেলেটি এই রোগ নিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এরই মধ্যে কাজলের বৌ এর কোল জুড়ে আর একটি পুত্র সন্তান আসল, কাজল ছিল যেমন মদ্যবিলাসী তেমনি ছিল খারাপ চরিত্রের অধিকারী। তাঁর বড় ছেলের বয়স যখন ১০/১২ এবং ছোট ছেলে বয়স ছয় মাস। হঠাৎ একটি কাজল স্ট্রোক করে মারা যায়। বড় ছেলেটির ৭ম শ্রেণীর পর আর পড়া-লেখা হলো না। ছোট ছেলেটি অনেক কষ্ট করে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়া-লেখা করে। বড় ছেলেটির যখন ২৫ বছর তখন সে একটি মুদির দোকানে কাজ করত। পরবর্তীতে তার মাতা তাকে বিয়ে করিয়ে দেয়। বিয়ের এক বছরের মধ্যে বৌ তার পূর্বের প্রেমিকার সাথে পালিয়ে যায়। কালকে তার আবার দ্বিতীয় বিয়ে গেল। এবারের বৌটি আমার মনে হয় ভালই হবে। তার পুত্রের দ্বিতীয় বৌ এর নাম হলো “সীমা শীল”। আমি সেই বিয়েতে গিয়েছিলাম। তার ছোট ভাই একটা ধোপার মেয়ের সাথে প্রেম করে। এখন হচ্ছে ঘোর ”কলি যুগ”। বর্তমান সমাজে বংশ মর্যাদার কোন দামেই নেই। সনাতন ধর্ম মতে ব্রাহ্মণের সাথে ব্রাহ্মণের বিয়ে হয়। সেখানে আবার একটি সমস্যা রয়ে গেছে। একই গোত্রের হলে বিয়ে হয় না। অন্যদিকে কায়েস্তের সাথে কায়েস্তের বিয়ে হয়। কিন্তু বর্তমানে তা আর এই সমাজে মানা হয় না। “প্রেমে যেন পরম তৃপ্তি” এই প্রেম করে বংশের অহংকার শেষ হয়ে গেছে। আর যেখানে বংশ মর্যাদা নেই, তার অস্থিত্ব থাকবে কোথা থেকে।