প্রবারণা পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধি উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা।তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাসের পর ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির এই দিনটিই বৌদ্ধদের বর্ষশেষ ও আনন্দঘন উৎসব হিসেবে পালিত হয়।

বৌদ্ধ ধর্মে বর্ষাকালকে ধ্যান ও সাধনার সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় ভিক্ষুরা ভ্রমণ বন্ধ রেখে এক স্থানে অবস্থান করেন, আত্মসংযম চর্চা করেন এবং ধর্মশিক্ষা নিয়ে মনোনিবেশ করেন। এই তিন মাস শেষে আসে প্রবারণা— যার অর্থ *আত্মসমালোচনা ও সংশোধনের আহ্বান।  ইতিহাসের আলোয় গৌতম বুদ্ধ নিজেই প্রবারণা অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন। বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুদের আত্মসমালোচনা ও শুদ্ধাচারের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে ধর্মচর্চা শুরু করার নির্দেশ দেন তিনি। সেই প্রাচীন ঐতিহ্যই আজও অব্যাহত রয়েছে বিশ্বের সব বৌদ্ধ সমাজে।

সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের বৌদ্ধবিহারগুলোতে দিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়।প্রবারণা পূর্ণিমার অন্যতম আকর্ষণ হলো ফানুস উড়ানো। সন্ধ্যা নামার পর শত শত ফানুস যখন আকাশে উড়ে যায়, মনে হয়— আলোর রশ্মিতে অন্ধকার ভেদ করে মানুষ নতুন আশার পথে যাত্রা শুরু করছে। এছাড়া ভিক্ষুদের ধর্মদেশনা, পূজা-উপাসনা, সৎকার্য ও দান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েও দিনটি পালন করা হয়। প্রবারণা পূর্ণিমা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়— এটি  অহিংসা, সহানুভূতি ও মানবতার আহ্বান। এ উৎসব আমাদের শেখায়, অন্যের কল্যাণে কাজ করা, মন থেকে হিংসা-অহংকার দূর করা এবং আত্মাকে নির্মল রাখা-ই প্রকৃত ধর্মচর্চা।

আকাশে ভাসমান ফানুস যেন মানুষের মুক্ত আত্মার প্রতীক। প্রবারণা পূর্ণিমা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— অন্ধকারের ভেতরেও আলো খুঁজে পাওয়া যায়, যদি মন থাকে নির্মল ও উদার। আত্মশুদ্ধির এই দীপ্ত উৎসব হোক মানবতার আলোকবর্তিকা।

0Shares

নিউজ খুজুন