‘নির্বাচন কমিশন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে : জিএম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থেকে মুক্তি চায়। কেননা এ দুটি দল অপকর্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে চলেছে। ক্ষমতার পরিবর্তনে এ অবস্থার পরিবর্তন হয় না। দেশের মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকেই বিকল্প শক্তি হিসেবে মনে করছে। তারা জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ে জাতীয় পার্টি দেশে বেশি গণতন্ত্র, সুশাসন আর উন্নয়ন দিতে পেরেছে। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ভবিষ্যতেও দিতে পারবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হচ্ছে অচল পয়সার এপিঠ-ওপিঠ। দেশের মানুষ চায় চকচকে নতুন পয়সা। জাতীয় পার্টির মতো রাজনৈতিক শক্তির দিকে তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ। কোটি কোটি বেকার, কর্মসংস্থান নেই। অভাব অনটনে যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল বাড়ছে, কিন্তু মানুষের আয় বাড়ছে না। পরিবার নিয়ে জীবন-যাপনে হাপিত্যেশ উঠেছে সাধারণ মানুষের। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে তেলের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে দেশে তেলের দাম কমানো হয় না। কৃষক যে ফসল ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে, সেই ফসল রাজধানীতে হাত ঘুরে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
‘বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গণপরিবহণের নৈরাজ্য থামছে না। গণপরিবহণ কে নিয়ন্ত্রণ করছে বিষয়টি পরিস্কার নয়। সরকার গণপরিবহণ চালাচ্ছে এটা বিশ্বাস করে না দেশের মানুষ বরং অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় গণপরিবহণ যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নিজেদের স্বার্থে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজদের হাতে। চাঁদা না দিয়ে কেউ নিজের জমিতে বাড়িও করতে পারে না। কৃষিপণ্য সরবরাহে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য। ফুটপাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অসহায়, দেখার যেন কেউ নেই। এগুলোর মূল কারণ সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, সার্বিকভাবে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি।’ দেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় জিডিপি বেড়েছে, জিডিপি বাড়লে মানুষের পেট ভরে না। দেখা যাচ্ছে জিডিপি বাড়লে সাধারণ মানুষের উপকার হয় না, তাই জিডিপি নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। জিডিপি বৃদ্ধির বা উচ্চ মাত্রার প্রধান সুফল চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ- সেটি তেমন হারে বাড়ছে না। বেকার সমস্যার সমাধানে প্রবৃদ্ধির কোনো ভূমিকা লক্ষ্যনীয় নয়।
সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, নির্বাচনে ভিন্নমতাবলম্বীদের মাঠে দাঁড়াতে দেয় না ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতার জোরে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হতে চায় তারা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীনরা প্রশাসনের সহায়তায় কলুষিত করছে নির্বাচনী ব্যবস্থা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে- এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। ‘নির্বাচন কমিশন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এক সময় নির্বাচন ছিল উৎসব মুখর, এখন নির্বাচন হচ্ছে ভয় আর আতঙ্কের নাম। দেশের মানুষ রক্তাক্ত নির্বাচন চায় না। দেশের মানুষ খুনোখুনির নির্বাচন পছন্দ করে না। ক্ষমতা ও কালোটাকার খেলায় দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কলুষিত হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন আইন না হওয়াও লজ্জাজনক।’

0Shares

নিউজ খুজুন