ডেল্টা লাইফের পরামর্শক কমিটি বাতিল

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরামর্শক কমিটি বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে এ পরামর্শক কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

চলতি বছরের ২৪ জুন চার ব্যক্তির সমন্বয়ে অবৈতনিক এ ‘পরামর্শক কমিটি’ গঠন করে আইডিআরএ। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অনিয়মের নিরীক্ষা ও রাজস্ব বকেয়া পরিশোধ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে এ কমিটি গঠন করা হয়।

পরামর্শক কমিটির সদস্য করা হয়- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক শহীদুল হক, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবুল হোসেন এবং ডেল্টা লাইফের সাবেক উদ্যোক্তা পরিচালক ও চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনকে।

পরবর্তীতে এর বিরোধিতা করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন ডেল্টা লাইফের শেয়াহোল্ডার মঞ্জুর রহমান। তারই প্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরামর্শক কমিটি বাতিল করে রায় দেন। রিটকারী মঞ্জুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান এ তথ্য জানান।

এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, আইডিআরএ ডেল্টা লাইফে চার সদস্যের যে অবৈতনিক পরামর্শক কমিটি দেয়, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। এর প্রেক্ষিতে আদালত শুনানি নিয়ে পরামর্শক কমিটি বাতিল করে রায় দিয়েছেন।

এদিকে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। সেইসঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ আচারণেরও অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটি।

সংবাদ সম্মেলনে ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেদিন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান অভিযোগ করে বলেন, আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান এক সময় ডেল্টা লাইফের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। এ জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের অ্যাকচুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নবায়ন অনুমোদন না দিয়ে এবং কোম্পানিকে নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিচ্ছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেও অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বহিষ্কার করে প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিচ্ছেন বলে দাবি করা হয়।

চাঁদা দাবির অভিযোগ তুলে চৌধুরী কামরুল আহসান বলেন, বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি কোম্পানির নিকট প্রথমে দুই কোটি, পরবর্তীতে এক কোটি ও সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ও তথ্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে।

ডেল্টা লাইফ থেকে এ ধরনের অভিযোগ তোলার পর ১১ ফেব্রয়ারি সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। মাসিক চার লাখ টাকা সম্মানীতে আইডিআরএর সাবেক এই সদস্যকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে চার মাস না যেতেই গত জুনে তার নিয়োগ বাতিল করে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ দফায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক যুগ্ম সচিব প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম। তার সম্মানীও সুলতান-উল-আবেদীনের মতো রাখা হয়। তবে গত ১০ অক্টোবর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রশাসক পদ থকে পদত্যাগ করেন মো. রফিকুল ইসলাম। ফলে জীবন বিমা কোম্পানিটিতে আবারও নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ।

এ দফায় প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সচিব ও আইডিআরএর সাবেক সদস্য মো. কুদ্দুস খান। নতুন প্রশাসকের সম্মানী ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

0Shares

নিউজ খুজুন