জাতীয় সংসদ ভবনের জাতীয় কবরস্থানে খান-এ-সবুর, শাহ আজিজুর রহমান, মশিউর রহমান খান যাদু মিয়া, স্পীকার তমিজউদ্দিন সরকার, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমেদের মত কিংবদন্তীতুল্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কবর অবস্থিত। অথচ বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কবর জিয়ারতের জন্য আসতেও সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করেছে, বাধা দিয়েছে। শোকর আলহামদুলিল্লাহ আজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা মাত্রই কবরস্থানের তালা খুলে মুসলিম লীগ নেতাকর্মীদের খান-এ-সবুরের কবর জিয়ারতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। মত ভিন্নতা ও সবকিছুতে দলীয় স্বার্থ খোজার কারণে এই রকম বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী জাতীয় নেতাদের আজ অমর্যাদা করা হয় এমনকি তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করি। এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না আসলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। খান-এ-সবুরের অনস্বীকার্য রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করেই ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে কৃতজ্ঞ খুলনাবাসী তাকে ৩টি আসনে নির্বাচিত করে এবং তার মৃত্যুর দশ বছর পর ভালবাসা থেকেই শহরের প্রধান সড়কটির নামকরণ করে খান-এ-সবুর রোড নামে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রতিহিংসা পরায়নতা থেকে খান-এ-সবুর সড়কের নাম বাতিল করেছে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট অবিলম্বে সড়কটি খান-এ-সবুর রোড নামে পুনর্বহালের জোরালো দাবী জানাচ্ছে।
তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের লিডার অব দি হাউজ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ পুনর্গঠনের মহানায়ক, উপমহাদেশের কিংবদন্তী পার্লামেন্টারিয়ান খান-এ-সবুরের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে জাতীয় সংসদ ভবনের জাতীয় কবরস্থানে মরহুমের কবর জিয়ারত শেষে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. মো. মহসীন রশিদ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। আরও উপস্থিত ছিলেন দলীয় মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, সহ-সভাপতি সৈয়দ আব্দুল হান্নান নূর, অতিরিক্ত মহাসচিব আকবর হোসেন পাঠান ও কাজী এ.এ কাফী, প্রচার সম্পাদক শেখ এ সবুর, প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল আলিম, ঢাকা মহানগর মুসলিম লীগ নেতা মাকসুদ আহমেদ, মনির হোসেন, মো. ইয়ামিন খান, যুব মুসলিম লীগ নেতা মো. আলী জিন্নাহ মানিক, শফিকুল ইসলাম জাবেদ, শহিদুল ইসলাম মিরাজ, মো. সুমন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার পশ্চাৎপদ ও বঞ্চিত মুসলমানদের মনে জাতিসত্তার চেতনার রাজনীতি যারা সৃষ্টি করেছিলেন তাদের মধ্যে খান-এ-সবুর ছিলেন অন্যতম। শালীন ও শিষ্টাচারের রাজনীতির ধারক খান-এ-সবুর উপমহাদেশ বিভক্তির পরও ভারতের সাথে যুক্ত থাকা বৃহত্তর খুলনা জেলাকে ১৯৪৭সালের ১৭ই আগস্ট বাউন্ডারি কমিশনে আপিলের মাধ্যমে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করেন, ফলশ্রুতিতে যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের অংশ হয়েছে। মূল্যায়নের মাপকাঠিতে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল পাকিস্তানে তথা বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তি একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে খান এ সবুরের সবচাইতে বড় সাফল্য। এছাড়াও খালিশপুর ও দৌলতপুর সহ পশ্চাৎপদ বৃহত্তর খুলনাকে শিল্পাঞ্চলে পরিণত করার মাধ্যমে তিনি শিল্প বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ১৯৬৯সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তিনি দেশের টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেন। আজন্ম ত্যাগী এ মহামানব তার সমুদয় সম্পত্তি ‘খান-এ-সবুর ট্রাস্ট’ গঠন করে জনহিতকর কাজের জন্য দান করে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তার ঢাকার বাসভবনটিতে এখন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজীবন মুসলিম জাতিসত্তার সৈনিক, খুলনার আপামর জনসাধারণের দেয়া উপাধি ‘সাহেব’ নামের এই মহান নেতা খান-এ-সবুর অবশ্যই বর্তমান কলুষিত রাজনীতির জন্য একটি অনুকরণীয় আদর্শ।