জনগণ ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য রাখতে হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।

আজ রাজধানীর রাজারবাগ বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ সদস্যদের ব্যবহার, সেবার মানসিকতা ও আন্তরিকতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। এর মাধ্যমে পুলিশের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কোনোরকম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার না হয়- সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারো কাছ থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা নেওয়া যাবে না। ঘুষ, দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও থানা পরিদর্শন করি। পরিদর্শনকালে পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা আমার নজরে আসে। তন্মধ্যে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হচ্ছে অধস্তন ফোর্সদের থাকা ও খাওয়ার সমস্যা। তিনি বলেন, পুলিশের যানবাহন সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। থানার জন্য ২শ’টি পিক-আপ ভ্যান ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে যা আজ ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠবে। এসব সমস্যা-সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। কাজ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যদের অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে বিষয়টি সর্বাগ্রে প্রয়োজন তা হচ্ছে- পুলিশ সদস্যদের ধৈর্য ধারণ। ধৈর্য ধারণ করে আলোচনার মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনে লাঠিচার্জ বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না।

পুলিশের সুদূরপ্রসারী কল্যাণে বর্তমান সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কনস্টেবল থেকে এসআই’দের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে উচ্চ সীমা (সিলিং) বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নিচের স্তরের পুলিশ কর্মকর্তারা আগের চেয়ে অধিক হারে ঝুঁকি ভাতা পাবেন। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পুলিশের এসআই ও এএসআই’দেরকে এ ঋণ প্রদান করা হবে। সরকার যাতে ঋণের সুদের টাকা পরিশোধ করে-সে বিষয়েও অনুরোধ জানানো হবে। তিনি বলেন, অধস্তন পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেদের বৃহত্তর জেলার মধ্যে পদায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। একইভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে পুলিশ সদস্য হলে তাদেরকে একই জেলায় পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, পুলিশের জনবল সংকট রয়েছে। তাই তাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওএন্ডই) জনবল বৃদ্ধি করা দরকার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি আইজিপি’কে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ধরন ও মাত্রা দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই এসব অপরাধ দমনে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি এসময় দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পদায়নের নির্দেশ দেন।

মতবিনিময় সভায় ট্রাফিকদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা-সহ ট্রাফিক বক্স/শেলটার স্থাপন, রাতে টহলরত পুলিশ সদস্যদের জন্য তাঁবু স্থাপন, মাদকের মূল হোতাদের ধরতে শক্ত অভিযান পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন আইজিপি বাহারুল আলম বিপিএম। সভায় বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন।পরে উপদেষ্টা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

0Shares

নিউজ খুজুন