আবছার উদ্দিন অলি : মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। আগামী ১০ জুলাই রবিবার অনুষ্ঠিত হবে ঈদ-উল-আজহা। আর সেই কারণেই চট্টগ্রামে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে কোরবানীর হাট জমে উঠেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু এখনও আসছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বাজারে তেমন বেচা বিক্রি নেই। তবুও জমে উঠেছে চট্টগ্রামের গরুর বাজার। তবে মহল্লায় মহল্লায় গরু বিক্রি হওয়াতে হাটে লোকজন কম দেখা যাচ্ছে এবং এসব গরুর দামও বেশি। প্রায় সব হাটে গরু আছে ক্রেতাও আছে কিন্তু বিক্রি নেই। সাগরিকা মার্কেটের গরু বিক্রেতা আবদুর শুক্কুর জানান, গত বছর এই সময়ে আমরা অনেকগুলো গরু বিক্রি করে ফেলেছিলাম। কিন্তু এ বছর নানা কারণে এখনো পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারি নাই।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাজারের ইজারদারদের সাথে সভা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন- চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। বিবির হাট গরু বাজারের বোরহান উদ্দিন চৌধুরী জানান চট্টগ্রামে অধিকাংশ জায়গায় এখন নিজস্ব গরুর খামার রয়েছে এবং এ সমস্ত খামারে সারা বছর গরু লালন পালন করা হয়। চট্টগ্রামে যে পরিমান গরুর চাহিদা রয়েছে তার চেয়েও বেশি গরু মজুদ আছে। তাই এবার কোরবানীতে পশু সংকট হবেনা।
সাগরিকা গরু বাজারে আকবর মামা বলেন, আমার হাটে সব সাইজের গরু রয়েছে। আপনি চাইলে ৫০ হাজার টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা দামের গরু কিনতে পারবেন। এছাড়াও মহিলা ক্রেতাদের গরু কেনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমার হাটে প্রতিদিন মহিলারা এসে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে, দামও সাশ্রয়ী। কোরবান উপলক্ষে প্রতিদিন সাগরিকা গরু বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসছে। তাই সব দামের গরু আমরা রেখেছি।
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর খামারির মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন- আমার খামারে ছোট বড় প্রায় ৬০টি গরু রয়েছে। সেখানে এক লাখ টাকা থেকে পঁচিশ লাখ টাকা দামেরও গরু আছে। ক্রেতারা এসে দেখে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি। দাম যা বলছেন তা খরচও উঠবেনা। অনলাইনে গরু বিক্রেতা আবদুল হামিদ বলেন- করোনা সহ নানা ঝামেলার কারণে মানুষ হাটে যেতে সাহস পাচ্ছেনা। তাই অনলাইনে গরু কেনার আগ্রহ বেশি। সে চিন্তা মাথায় রেখে আমরা অনলাইনে গরু বিক্রির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। সাগরিকা গরু বাজারের আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন- করোনার কারণে মানুষ অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছে। তাই আমরা যারা বাজারে গরু বিক্রি করতে এসেছি, তাদের গরু বিক্রিতে বেগ পোহাতে হবে।
একদিকে চলমান মহামারী করোনা ভাইরাসে চতুর্থ ধাপে মৃত্যু ও শনাক্ত হারের উর্ধ্বগতি রয়েছে। সব মিলিয়ে গরুর বাজারে একেবারেই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। বিক্রেতারা খুব চিন্তায় আছেন। সারা বছর কোরবানীর ঈদে গরু বিক্রির জন্যই ধার দেনা ও ঋণ নিয়ে গরু লালন-পালন করেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি সবকিছু উলোট পালট করে দিয়েছে। প্রতিটি গরুতে যে পরিমাণ খরচ পড়েছে, ক্রেতারা ঐ দামও দিতে আগ্রহী না। সব হতাশার পরও চট্টগ্রামে আগামীকাল গরু বাজার জমে উঠবে এমনটি প্রত্যাশা বাজারের ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতার।