গোপনে কাউকে সদস্য করা যাবে না : আমীর খসরু

চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়িতে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির ‘সদস্য নবায়ন’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীজুলুম-নির্যাতন না করা’ আ. লীগের সমর্থকরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন বলেন,  সদস্য করার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে দলে নেওয়া যাবে না। যাদের কারণে আমাদের ভোট কমে যাবে।

আর আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল; কিন্তু বিএনপির কার্যক্রমে বাধা দেয়নি, আমাদের ওপর জুলুম করেনি, উল্টো ভেতরে-ভেতরে আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাদের দলে নিতে কোনো সমস্যা নেই।’ ‘গোপনে কাউকে সদস্য করা যাবে না। বিএনপিতে যোগ দিতে হলে ঘোষণা দিতে হবে এবং প্রকাশ্যে যোগ দিতে হবে। তাই এ জায়গাতে আমাদের সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ দুই শ্রেণি বাদ দিয়ে বাকিরা সহজভাবে আমাদের সদস্য হতে পারবেন।’ বৃহত্তর অংশকে আমাদের মেম্বারশিপের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। কারণ এটা দেশের বৃহত্তর দল, তাই দেশের বৃহত্তর অংশ যাতে বিএনপির সদস্য হয়।  এ মেম্বারশিপ দিনের আলোতে করতে হবে; অন্ধকারে নয়। দিনের আলোতে আজকে আমরা এখানে করছি, আপনারাও প্রতিটি শহর-থানা-ইউনিয়নে এ ধরনের মেম্বার করবেন। যারা বিএনপির সদস্য হবে, আমরা চাই তারা দিনের আলোতেই হোক। এখানে কোনো লুকোচুরি নেই। একদিকে পুরুষের লাইন থাকবে; আরেকদিকে মহিলার লাইন থাকবে। এটা দৃশ্যমান হতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে হবে। এটাও একটা আন্দোলন; শুধু মেম্বারশিপ না। এটাকে আন্দোলন হিসেবেই নিতে হবে। আর আমাদের কথাগুলো মানুষের কাছে যেতে হবে।’

‘আগামীদিনে দেশের মানুষের স্বপ্ন নতুন দেশ গড়ার’ সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে দেশে একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সাধারণ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিএনপির নতুন স্লোগান হচ্ছে— অর্থনীতিতে গণতান্ত্রয়ন করা। মানে রাজনীতিতে গণতান্ত্রয়ন করা আর অর্থনীতিতে গণতান্ত্রয়ন করা করা। অর্থাৎ, দেশের সর্বস্তরের মানুষ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দেশের উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের জন্য সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিব আগামীদিনে। এ গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির ৯১-৯৬ সরকারে দেখিয়েছি, ২০০১-০৭ এ দেখিয়েছি; আপনারা দেখেছেন কিভাবে কর্মসংস্থান বেড়েছে, রপ্তানি বেড়েছে। প্রত্যেকবার কিন্তু বিএনপির সময়। এসব কিন্তু আমরা কখনো বলি নাই। এসব কথাগুলো জনসম্মুখে নিয়ে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আমাদের কাজের অংশ হিসেবে মেম্বারশিপের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।’

গত ১৫ বছর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০-১৫ বছর ধরে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। কারো বাড়িতেও যদি একটা অনুষ্ঠান বা আলোচনা হচ্ছে, সেখানেও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন উপস্থিত। আর বাইরে সাংগঠনিক কার্যক্রম অসম্ভব বললে ভুল হবে। সেটা আমরা সবাই জানি। কারণ দীর্ঘ ১৫ বছর বিএনপির মতো এত বড় একটা বিশাল দল; যারা রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, সঠিকভাবে দলের যে কাজগুলো করার কথা ছিল সেগুলো আমরা করতে পারিনি। বাধা উপক্ষো করে অনেক কিছু করেছে, সংগ্রাম মৃত্যুবরণ, রাস্তায় নামতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছে, চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে; প্রায় ৭০ লাখ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম যেভাবে করার কথা ছিল সেভাবে করতে পারি নাই।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ এসেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বৃহত্তম দল; এটাকে সাংগঠনিক-রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালীর দিকে নিয়ে যেতে হবে।

সদস্য নবায়নের মাধ্যমে বিএনপি নতুন যাত্রা শুরু জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা হচ্ছেন প্রত্যেকটি এলাকার নোঙর। মানে যেভাবে নোঙর জাহাজ ধরে রাখে। আপনারা বিএনপির জাহাজটাকে ধরে রাখবেন। তাই আপনাদেরকে কাজটা সঠিকভাবে করতে হবে। এটার ওপর নির্ভর করছে— আগামীদিনে বিএনপির রাজনীতি, এগিয়ে যাওয়া, নির্বাচন, বাংলাদেশ গড়ার। অনেক বড় দায়িত্ব কিন্তু। সকলে কষ্ট করে এ দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করবেন। এটাই বিএনপির ভবিষ্যৎ, এটা শুধু বিএনপির সদস্য নবায়ন নয়। এটা বিএনপির নতুন একটা শুরু। এখান থেকে আমাদের নতুন যাত্র। এ যাত্রা আমাদের সফল করতে হবে। সবাই এগিয়ে আসতে, একসাথে কাজ করতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব রহমান শামীম,কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ।

0Shares

নিউজ খুজুন