চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী শক্তিনাথানন্দ মহারাজ বলেছেন, বিশ্বজনীন ধর্মগ্রন্থ শ্রীশ্রীমদ্ভগবত গীতার কর্ম-জ্ঞান ও ভক্তি মানুষকে বিভিন্ন অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। ধর্ম চেতনা ও ধর্মবোধ মানুষকে সত্য সনাতন সুন্দরের পথে পরিচালিত করার ফলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার দূরীভূত হয়। এখানে মঠ-মন্দির শুধু ধর্ম চর্চার সাধনা করে না। মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। ধর্মবোধ মানুষকে ন্যায়ের শিক্ষা দিয়ে সভ্য করেছে। নিষ্কাম কর্ম ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ থেকে উত্তরণের জন্য মনুষ্যত্বেও সাধনা করাই হলো গীতা শিক্ষা। গতকাল ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে নগরীর জে.এম.সেন হলে শঙ্কর মঠ ও মিশন চট্টগ্রাম মহানগর শাখা কর্তৃক আয়োজিত যোগাচার্য পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ^রানন্দ গিরি মহারাজের ১১৪তম শুভ আবির্ভাব উৎসবে ধর্ম মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আধ্যাত্বিক জীবন চর্চার মহাতীর্থপীঠ শঙ্কর মঠ ও মিশন। এ মঠে বসে সুদীর্ঘ ৮০ বছর বসে শ্রীমদ্ভগবত গীতা প্রচারের মাধমে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে নিরলস সাধনা করেছেন যোগাচার্য পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ^রানন্দ গিরি মহারাজ। তিনি ছিলেন একজন পরম পুরুষ। গীতার আদর্শ ও উদ্দেশ্য বুকে ধারণ করতে পারলে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ হবে।
শঙ্কর মঠ ও মিশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি দানবীর অদুল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক লায়ন সন্তোষ কুমার নন্দীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সনাতন ধর্ম মহাসম্মেলনের উদ্বোধন করেন সীতাকু- শঙ্কর মঠ ও মিশনের মঠের অধ্যক্ষ শ্রীশ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। মহান অতিথি ছিলেন ভারতের হরিদ্বারের গুরুধামের অধ্যক্ষ আচার্য শ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিষানন্দ পুরী মহারাজ। ধর্মীয় মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদ অধ্যাপক স্বদেশ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, প্রফেসর সুকান্ত ভট্টাচার্য, প্রফেসর বিজয় লক্ষী দেবী, প্রফেসর কুশল বরণ চক্রবর্তী, শ্রীমৎ স্বামী সজলানন্দ গিরি মহারাজ, শ্রীমৎ স্বামী নির্মলানন্দ ব্রহ্মচারী, ধর্মতত্ত্ববিদ উত্তম চক্রবর্তী। শঙ্কর মঠের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সুলাল কান্তি চৌধুরী, অধ্যাপক তড়িৎ কুমার ভট্টাচার্য, সমীর কান্তি পাল, মাস্টার অজিত কুমার শীল, রঞ্জিত মল্লিক, প্রকৌশলী সুবল চন্দ্র শীল, অজিত কুমার শীল, লায়ন দিলীপ কুমার শীল, সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, অধ্যাপক অঞ্জন দাশ, প্রদীপ মহাজন জহর, অর্পণ ধর, চিত্তরঞ্জন শীল শিবু, কাজল পাল, মিন্টু পাল লিটু, মিন্টু শীল, লিটন পাল প্রমূখ। মঠের সাধু-সন্ন্যাসীবৃন্দ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় বেলুন উড্ডয়ন ও শান্তির কপোত অবমুক্তকরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন সীতাকু- শঙ্কর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীশ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। বিশ^শান্তি শ্রীশ্রীগীতাযজ্ঞের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করেন তিনি। শ্রীমৎ জগদীশ্বরানন্দ ব্রহ্মচারী শ্রীশ্রীগীতাযজ্ঞ পরিচালনা করেন।
শেষে গ্রাম-বাংলার জননন্দিত মরমী শিল্পী শিমুল শীল, শিল্পী অমিত সেন, শিল্পী মিশন দত্ত সপু, শিল্পী বিপলু পাল ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়া সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠের শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন।
এর আগে যোগাচার্য পরমহংস শ্রীশ্রীমৎ স্বামী জ্যোতিশ^রানন্দ গিরি মহারাজের শুভ আবির্ভাব উৎসব উপলক্ষে সকাল থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল-গুরু পূজা, মঙ্গলারতি, বিশ^শান্তি শ্রীশ্রীগীতাযজ্ঞ, হরি ওঁ কীর্ত্তন, শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠ, গৈরিক ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, অখ- প্রদীপ প্রজ¦লন, দীক্ষাদান, সমাজসেবা কার্যক্রম, সম্মাননা স্মারক প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, দুপুর ও রাতে প্রসাদ বিতরণ।