একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি বেগম মুশতারী শফীর জীবনাবসান হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর) ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম মুশতারী শফী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
৮৩ বছর বয়সী বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগও ছিল। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।
মুশতারী শফী ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলায়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ শফী এবং ছোট ভাই এহসানকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর পরিবার একাত্তরে চট্টগ্রামে স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরোসময় তিনি ওই বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে হিসেবে কাজ করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি একাধিক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া ষাটের দশক থেকে তিনি নারী আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন জোরদার হলে তিনি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি এতে নেতৃত্বও দেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রয়াণের পর দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের মূল নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি।
এছাড়া বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘসময় ধরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। একযুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার বেগম মুশতারী শফী দেশে প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি কর্তৃক ২০১৬ সালে ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়।
বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে উদীচী চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় বলা হয়েছে, উদীচীসহ চট্টগ্রামের প্রগতিশীল সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবককে হারিয়ে আমরা গভীর শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিশীল সংস্কৃতি অঙ্গণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা কখনোই পূরণ হবার নয়।