উত্তরাঞ্চল আর কখনো অবহেলিত থাকবে না উল্লেখ করে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো বিশেষ মর্যাদার দাবি রাখে। কিন্তু এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এ অঞ্চল আর অবহেলিত থাকবে না। উত্তরাঞ্চলের মানুষগুলো অনেক ধর্মপ্রাণ ও অল্পে তুষ্ট। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে আল্লাহ রহমত বরকত দান করুন। তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেছেন, প্রতিবেশী ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকবো। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা প্রতিবেশীসুলভ আচরণ চাই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। আদালত যখন চাইবে তখন তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য তিনি ভারতের প্রতি আহবান জানান।”
৮ নভেম্বর শুক্রবার সকালে নীলফামারী জেলা জামায়াতের উদ্যোগে পৌরসভা মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আনতাজুল ইসলামের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, মাহবুবুর রহমান বেলাল, শহীদ মহিদুলের পিতা আনোয়ার হোসেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকীম, নীলফামারীর সাবেক জেলা আমীর আব্দুর রশিদ, দিনাজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, লালমনিরহাট জেলা আমীর এডভোকেট আবু তাহের, নীলফামারী জেলা নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, পঞ্চগড় জেলা আমীর অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, নীলফামারী জেলা খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা সাদ্দাম হোসেন জেহাদী, ঠাকুরগাঁও জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, নীলফামারী জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, রংপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ সালাফী, শ্রমিক কল্যাণ নীলফামারী জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল, জেলা জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক ছাদের হোসাইন প্রমুখ।
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “বিগত সাড়ে পনের বছর দেশে কোনো শান্তি ছিল না। সকল ধর্মের মানুষ নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ছিল বেশি নির্যাতিত। সকল অফিস সীলগালা করে দিয়েছিল। কাউকে ঘরে থাকতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর উপর আঘাত দেয়া হয়েছে। বিডিআর এর সাতান্ন জন দেশ প্রেমিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর ঘাতকদের পালিয়ে যেতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে কিন্তু সে তদন্ত রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর উপর আঘাত দেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আল্লামা সাঈদীসহ এগারজন শীর্ষ নেতাকে হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ছিল ষোলআনা মিথ্যা। স্বাধীনতার পর একাত্তর সালের অপরাধে যে সব মামলা হয়েছে তার মধ্যে এসব নেতৃবৃন্দের নামে একটি মামলাও ছিল না। একশত পঁচানব্বই জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু তারা একজনও এদেশের নাগরিক ছিলেন না। দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর মামলার উদ্ভব হয়। সাক্ষীদেরকে অর্থ সম্পদ দিয়ে সেইফহোমে রেখে শিখিয়ে দিয়ে সাক্ষ্য দেয়া হয়। ব্রাসেলস থেকে জিয়াউদ্দিন বিচারককে রায় লিখে দেয়। বিচারকের নামে দলীয় ক্যাডার দিয়ে রায়ের মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বর্তমান বাংলাদেশ গঠনের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, আমরা শহীদদের উত্তরসূরি। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গঠন করা আমাদের দায়িত্ব। এদেশে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা নিজেরা যেমন কোনো অপরাধ করবো না, দুর্নীতি করবো না, তেমনি কাউকে অপরাধ ও দুর্নীতিও করতে দিব না। আমরা ঘুষ খাই না, অন্যকেও খাইতে দিব না। জামায়াতে ইসলামীর দুইজন মন্ত্রী পর্যায়ক্রমে তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা এতই পরিচ্ছন্ন ছিলেন যে, তাদের পিছনে অনুসন্ধানী লোক লাগিয়ে এক টাকার দুর্নীতিও কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে তদবিরেরও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জনগণ আমাদের দায়িত্ব দিলে সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো ঘুষ, দুর্নীতি এবং কোনো তদবিরও থাকবে না। আমরা জনগণের জানমালের পাহারাদার হবো। এ জন্য তিনি জামায়াতের নেতাকর্মীদের তৈরী হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরও বলেন, দেশে শিক্ষিত কোনো বেকার থাকবে না। মা-বোনদের ইজ্জত সম্মান নিরাপদ থাকবে। সকলের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের নাগরিকরা দল মত নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করবে। দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি বলে কিছু থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।”