ইসরায়েলের গণহত্যা আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব সমর্থন ও মুনাফার রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। ঢাবির অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংশষজ্ঞ ও গণহত্যার প্রতিবাদে এক অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে তিনি একথা বলেন।
এসময় সংগঠনের আহবায়ক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, গত আট বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণকে অত্যাচার নির্যাতন করে যাচ্ছে ইসরাইল। তারা এটি করেই যাবে। এর বিরুদ্ধে আমাদের সসস্ত্র প্রতিবাদ জানাতে হবে। ইসরায়েলের গণহত্যা আন্তর্জাতিক শক্তির নীরব সমর্থন ও মুনাফার রাজনীতি। তা না হলে এত অন্যায় ও অবিচার হওয়ার কথা নয়। সারা বিশ্বের সবগুলো দেশকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ইসরাইলকে মোকাবিলা করতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে যুদ্ধে নাম লেখাতে আমরা প্রস্তুত আছি। অবিলম্বে গাজায় গনহত্যা বন্ধ করতে হবে।
বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.আব্দুস সালাম বলেন, আজকে গাজায় যত মানবাধিকার আছে সব লঙ্ঘিত করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ আমাদের করতে হবে। আমি দাবি জানাচ্ছি স্টপ জেনোসাইড। যুদ্ধ ও গনহত্যা বন্ধ হোক। তবে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশে যেসব ব্যাবসা প্রতিস্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে তা ঠিক হচ্ছে না। এসবেরও প্রতিবাদ আমরা জানাই।। আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. ইকরামুল হক বলেন, পৃথিবীতে আইন থেকে থাকলে ইজরাইল গনহত্যা চালাতে পারতো না। জেনেভা কনভেনশনের যে যুদ্ধের আইন ও নীতীমালা আছে তা ইজরাইল লঙ্ঘন করছে। শিশু, নারী ও যুদ্ধের সাধারণ নীতিমালা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন হচ্ছে। জাতিসংঘ প্রমান করুক যে ‘ল এক্সিস্টস’ কারন আইন বলতে কিছু থেকে থাকলে ইসরায়েলের পক্ষে এই গনহত্যা চালানো সম্ভব না৷
সাবেক ঢাবি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ.ফ.ম ইউসুফ হায়দার বলেন, অক্টোবর ২০২৩ এ তাদের ধারনা ছিল তারা ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে ফেলবে। কিন্তু হামাস এবং হিজবুল্লার প্রতিরোধের মুখে আল্লাহর রহমতে এখনো তারা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তবে যে যেই ভাষা বোঝে তাকে সে ভাষায় জবাব দিতে হবে। ইসরাইল একটা জাতিগত নিধন করতে চায়। তাদের দর্শন হলো এখন যদি শিশুদের হত্যা করা না হয় তাহলে তারা বড় হয়ে যুদ্ধ করবে৷ সুতরাং ইসরায়েলকে তাদের ভাষায় জবাব দিতে হবে৷ আমার তো মনে হয় যুদ্ধ প্রয়োজন নেই। কেবল ওপেকভুক্ত দেশগুলো যদি তেল দেওয়া বন্ধ করে তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে আসবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবে এখানে এসেছি। যদি মনুষত্ববোধ থেকে থাকে আমাদের সকলেরই এ বিষয়ে সামনে আসা উচিত। আমাদের যদিও করার কিছু নেই কিন্তু আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ইসরাইল যা খুশি করুক না কেন তারা ফিলিস্তিনি জাতির কিছুই করতে পারবে না তারা জেগে থাকবে, টিকে থাকবে। ইসরায়েলের সাথে যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা আছে তার সাথে আমাদের সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। সকল দেশ ও জাতিসংঘকে আহ্বান জানাচ্ছি এই নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য।
ঢাবির কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড.ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বিবেকের তাড়নায় আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইজরাইল বর্বর গনহত্যা চালিয়ে আসছে যার ১৮ মাস পেরিয়ে গেছে। গাজা আজকে একটি মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয়েছে। প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সমর্থন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইজরাইল যে নৃশংস গনহত্যা চালিয়েছে যার তীব্র নিন্দা আমরা জানাচ্ছি। আমরা ইজরাইলকে জানাতে চাই এই গনহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, যেসব দেশ সহযোগীতা করছে তাদেরকে সহযোগীতা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘ ও ওআইসিকে এগিয়ে আসতে হবে। বিগত ফ্যাসীবাদী আমলে আমরা দেখেছি ফোনে আড়িপাতার যন্ত্র আমদানি হয়েছিল এই ইজরাইল থেকে, আমাদের পাসপোর্ট থেকে “এক্সেপ্ট ইজরাইল” বাতিল করেছে। আমরা চাই না বাংলাদেশের সাথে ইজরাইলের কোনো লিখিত অলিখিত সম্পর্ক থাকুক।
ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.আব্দুস সালাম, ঢাবির সাদা দলের যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার, আইন অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. ইকরামুল হক, সাবেক ঢাবি উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ.ফ.ম ইউসুফ হায়দার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ঢাবির কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড.ছিদ্দিকুর রহমান খান, ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান, শামসুন্নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাসরিন, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক জিন্না, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল, ফার্মেসির অধ্যাপক ড. আসলাম, মহসিন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম সহ শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
পাঠক সংখ্যাঃ ২৮
0Shares