নিজস্ব প্রতিবেদক : পৌষালি সন্ধ্যা, ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বলছে। ধূপের গন্ধে ভরে উঠছে আকাশ-বাতাস। উঠোনজুড়ে আলপনা, তার মাঝে স্নিগ্ধ পদচিহ্ন। বাংলার ঘরে ঘরে আজ লক্ষ্মীদেবীর আরাধনা। এই পূর্ণিমার শুধু দেবীর পুজোই করি না, একান্তভাবে টেনে আনি তাঁকে আমাদের জীবনের কেন্দ্রে সৌভাগ্য, শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে।
কে জাগে?—এই প্রশ্ন থেকেই ‘কোজাগরী’ শব্দের উৎপত্তি। লোকবিশ্বাস, এই দেবী লক্ষ্মী পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং সেই গৃহে আশীর্বাদ বর্ষণ করেন, যেখানে জেগে তাঁর নাম গাওয়া হয়, পুজো করা হয়। এই জাগরণ শুধু এক রাত জাগা নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক সচেতনতা, জীবনের প্রতি শুভ ও পবিত্র আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ।লক্ষীপূজা মানেই ঘরদোর সাফসুতরো, নতুন করে সাজানো। বাংলার ঘরের মাটিতে আঁকা আলপনা যেন দেবীকে আমন্ত্রণ জানায়। চাল-আটা-রং দিয়ে আঁকা সেই পদচিহ্ন মানে, দেবী লক্ষ্মী আমাদের গৃহে আগমন করছেন সদা শুভ, সদা আশীর্বাদময় হয়ে।
লক্ষীপূজার মূল আকর্ষণ হল দেবী লক্ষ্মীর প্রতিমা বা ছবি, যার সামনে বসে নিয়ম মেনে আরাধনা করা হয়। চাল, দুধ, দই, মধু, ঘি দিয়ে ‘পঞ্চামৃত’ তৈরি হয়। নারকেল, চিঁড়ে, মুড়ি, নাড়ু, পায়েস—এইসব পূজার প্রসাদে উঠে আসে বাংলার নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতির পরিচয়।
অনেকে পাঠ করেন **লক্ষ্মী পঞ্চালী**, যেখানে দেবীর কাহিনি ও মাহাত্ম্য বর্ণিত। দেবী লক্ষ্মী শুধু ধনের দেবী নন, তিনি সংসারের শৃঙ্খলা, শান্তি এবং মাতৃত্বের প্রতীক। তাই বাংলার বাড়িতে, বিশেষত গৃহিণীরা লক্ষীপূজাকে খুব গুরুত্ব দেন। এই পূজা যেন এক আত্মিক সংযোগ গড়ে তোলে দেবীর সঙ্গে, পরিবার ও ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্বাসের এক অনুপম বহিঃপ্রকাশ।
লক্ষীপূজা শিক্ষা দেয় পরিচ্ছন্নতা, ভক্তি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। যান্ত্রিক জীবনে এই পূজা আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তাই আলো, আলপনা আর আরাধনার এই উৎসব শুধু একদিনের নয় এ যেন বাংলার চিরন্তন বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।