হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভাষণে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে তার সাথে হাত মেলানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। “আজ আমাদের জন্য একটি গৌরবময় দিন। তারা (ছাত্ররা) এই দেশকে রক্ষা করেছে এবং পুনর্জন্ম দিয়েছে। এখন আমাদের ব্রত হল নতুন বাংলাদেশকে দ্রুত এগিয়ে নেয়া।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস তৈরি করেছে। সেই জয়কে সামনে রেখে আমাদের আরও শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
ড. ইউনূস যেসব তরুণ এ পরিবর্তন সম্ভব করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। আবু সাঈদের (ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ) সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে আবেগাপ¬ুত কন্ঠে তিনি বলেন, “তার ভাবমূর্তি সবার হৃদয়ে গেঁথে আছে। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যে অবিশ্বাস্য সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন তা কেউ ভুলতে পারবে না। এর পরে কোন যুবক পুরুষ বা মহিলা আর ভয় পায়নি।” এই স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় এই স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে”।
সরকার তাদের রক্ষা করবে, তাদের কোনো প্রকার ঝুঁকি ও নির্যাতনের মুখে ফেলবে না এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের উপর পুরো দেশ একটি বড় পরিবার। আমরা একসাথে চলতে চাই। আমরা সকল বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব পরিহার করতে চাই। যারা লাইনচ্যুত হয়েছে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে চাই, যাতে আমরা একসাথে কাজ করতে পারি।”
দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উলে¬খ করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীসহ অনেকেই হামলার শিকার হচ্ছে এবং বিভিন্ন অফিস-প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হচ্ছে, যা ষড়যন্ত্রের অংশ। এগুলি আমাদের কাজ নয়। আমাদের দায়িত্ব সবাইকে রক্ষা করা।” যারা লাইনচ্যুত হয়েছে তাদের সঠিক পথে আনতে হবে।
তিনি আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে জনগণ তাদের সমস্যার সমাধানে এসব বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে পারে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা আমাদের প্রথম কাজ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে আরো পদক্ষেপ নিতে হবে।”
জনগণকে তার ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা যদি আমার প্রতি আস্থা রাখেন, তাহলে আপনাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশের কোথাও কেউ হামলার শিকার হবেন না। এটাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। আমার কথা না শুনলে, আমার এখানে কোনো দরকার নেই এবং আমি যা করছি আমাকে তা করতে দিন এবং আমার কাজে ব্যস্ত থাকতে দিন। অপার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইউনূস বলেন, “এখন আমাদের বীজতলা তৈরি করতে হবে এবং আবার জেগে উঠতে হবে। তারা (তরুণরা) বীজতলা তৈরি করবে। আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে দেখব এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী এগিয়ে যাব।”
তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান যাতে “আমরা দ্রুত একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে যেতে পারি”।