আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ লোকজনই সার্চ কমিটিতে থাকবে: রিজভী

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সব লোকজনই নির্বাচন কমিশন গঠনে নতুন সার্চ কমিটিতে থাকবে। তিনি বলেন, সার্চ কমিটি গঠনে যে আইন সেটি তো পরিচালনা করবে সরকার এবং তার নির্বাহী বিভাগ। যারা আইন প্রণয়ন করবেন তারা তো সরকারের কথায় করবেন। আওয়ামী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ না হলে আইন প্রনয়ন করা যায় না। আর যে সার্চ কমিটি হবে, সেটি আওয়ামী বাকশালী চেতনার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হবে। মুজিব কোট পরা লোকেরাই সরকারের সার্চ কমিটিতে থাকবেন। এই সার্চ কমিটি হারিকেন দিয়ে খুঁজে খুঁজে মুজিবকোট পরা লোকদের বের করে আনবে।
নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী তাঁতীদলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান পার্লামেন্টকে অবৈধ পার্লামেন্ট আখ্যায়িত করে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ওটা একটি নিশিরাতের পার্লামেন্ট, শেখ হাসিনার ইচ্ছার পার্লামেন্ট। ওখানে প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে এমন কোনো নেতা নেই। এই পার্লামেন্টে যে আইন হবে সেটাতো মুজিব কোট পরা আইন হবে। সেখানে মুজিব কোট পরা সার্চ কমিটি হবে। সেখানে কোনো নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি হবে না। তারা মুজিব কোট পরা লোক বাছাই করবে। তারা কোনো নিরপেক্ষ লোক বাছাই করবে না। ওই সার্চ কমিটি আরেকজন কে এম হুদাকে খুঁজে বের করবে। আরেকজন রকিবুলকে বের করবে। যারা ভোটার ছাড়া নির্বাচন করতে অত্যন্ত পারদর্শী, যারা দিনের আলোতে যে ভোট হয় সেই ভোটে বিশ্বাস করে না। সেই রকম হুদা সাহেবদের বের করে আনবে এই সার্চ কমিটি। কারণ এই নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে আইনটি করা হচ্ছে, এটি একটি অবৈধ আইন। এটি একটি বাকশালী আইন। এই সার্চ কমিটির সাথে অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন করার কোন সম্পর্ক থাকবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের মানুষ যারা বিদেশে আছেন, তারা যদি এই সরকারের সমালোচনা করেন তাদের পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে; তাদের নাগরিকত্ব থাকবে না। সরকারের সমালোচনা আর রাষ্ট্রদ্রোহিতা তো এক জিনিস নয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে এটার আলোচনা হয়েছে। পাসপোর্ট তো একটা ট্রাভেল ডকুমেন্টস এটা বাতিলের মধ্য দিয়ে আপনারা কি বোঝাতে চাচ্ছেন? তাহলে তো আন্তর্জাতিকভাবেই তাদেরকে নাগরিক শুন্য করে দিলেন। তার কোন রাষ্ট্র থাকলো না। রাষ্ট্রহীন একজন নাগরিক হিসেবে বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকবে না। সরকারের বিরোধীতা করলে দেশে গুম হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের সমালোচনা করলে বিচারবহির্ভূত হত্যার স্বীকার হতে হয়। তাই দেশের বাহিরে বসে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন তাদের কোনভাবে ধরতে না পেরে এখন আবার গবেষণায় বসছেন এদের কেউ কিভাবে ধরা যায়। সেজন্য দেখা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেউ বক্তব্য দিচ্ছে তার বোনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে রাখা হচ্ছে। এত জুলুমবাজ, এত ভয়ঙ্কর অত্যাচারী সরকারের দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে আর নেই।
তিনি বলেন, সাংবাদিক কনক সারোয়ার বাইরে বসে সরকারের বিরুদ্ধে কেনো কথা বলছেন; শুধু সেইজন্য বাংলাদেশে তার বোনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে রাখা হলো। যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ কথা বললে বাংলাদেশে তার বোনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার বিরোধী দল শূন্য বাংলাদেশ চায়, সরকার বিরোধী মত শূন্য বাংলাদেশ চায়। এখন নাগরিক শুন্য রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টায় লিপ্ত এই সরকার। ৭২ সালের সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন করার নির্দেশনা দেয়া আছে। অনেকেই বলছে আইন নেই, আইন নেই। সরকার ভাবলো আমরা এটার একটা সুযোগ নেই। আপনি তো আইন করবেন একটি বাকশালী পার্লামেন্টে। পার্লামেন্টে দুয়েকজন ছাড়া সবই তো আপনার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আজকে যে আইনটি পার্লামেন্টে তোলা হবে সেটি দেখে মনে হচ্ছে এটি সার্চ কমিটি গঠনের খসড়া। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে আইন সেই আইন এটি না। তাহলে বাকশালী পার্লামেন্টে যে খসড়া আইন তুলছেন সার্চ কমিটি গঠন করার জন্য। এই আইনের মধ্যে জনগণের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই।
জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

0Shares

নিউজ খুজুন