অটোমেশনের মাধ্যমে চসিককে নাগরিকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হবে: সিটি মেয়র 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নাগরিক সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে অটোমেশন ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার চসিকের অনলাইন জব পোর্টালের উদ্বোধন করেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক গঠিত চসিকের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সভায় মেয়র বলেন, অটোমেশনের মাধ্যমে চসিককে আরও আধুনিক ও নাগরিকবান্ধব করা হবে। প্রতিটি সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার মাধ্যমে নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো হবে। চসিক দেশের অন্যতম প্রধান সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রযুক্তির এই যুগে দক্ষ জনবল খুঁজে বের করতে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করতে আমাদের একটি আধুনিক জব পোর্টাল প্রয়োজন।
মেয়র জানান, চসিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এতদিন আবেদন, ফি প্রদান, পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ও প্রবেশপত্র ইস্যু সবকিছু ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হতো, যা অনেক সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য ছিল। নতুন অনলাইন জব পোর্টালের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রæততম সময়ে ও স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, “এই পোর্টালের মাধ্যমে প্রার্থীরা সহজেই আবেদন করতে পারবেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যাবেন। এতে হয়রানি কমবে, নিয়োগ দুর্নীতিমুক্ত হবে এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ করা সহজ হবে।”
নতুন জব পোর্টাল ব্যবহার করে শিগগিরই বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মেয়র। মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আরও ঘোষণা দেন, একটি নতুন স্মার্ট অ্যাপ চালু করা হবে, যা চট্টগ্রামের নাগরিকদের বিভিন্ন সেবা সহজলভ্য করবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকরা চসিকের সবগুলো বিভাগে সরাসরি সমস্যার তথ্য পাঠাতে পারবেন।
এই অ্যাপের মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না হলে সরাসরি অভিযোগ করা যাবে, রাস্তার গর্ত বা নষ্ট হওয়া রাস্তাগুলোর ছবি তুলে পাঠানো যাবে, নালা ও ড্রেন পরিষ্কার হয়নি কিনা, সে বিষয়ে জানানো যাবে, স্ট্রিট লাইট নষ্ট হলে দ্রæত মেরামতের জন্য অভিযোগ করা যাবে, স্কুল বা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কোনো সমস্যা হলে সেটিও জানানো যাবে, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অতিরিক্ত চার্জ নিলে অভিযোগ করা যাবে। এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে নাগরিকরা সরাসরি আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন, ফলে সেবাগুলোর মান নিশ্চিত হবে।
“হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ সহজ করতে এবং রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করার জন্য চসিকের ট্যাক্স ব্যবস্থাও অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। নাগরিকরা সহজেই হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারবেন। কোনো কর বাড়ানো হলে তার আপত্তি বা নিষ্পত্তির আবেদন অনলাইনে করা যাবে। আমরা চাই জনগণ সহজে সেবা পাক, হয়রানির শিকার না হোক। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে আরও আধুনিক ও নাগরিকবান্ধব নগরীতে রূপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।”
চসিককে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত রাখতে এবং নাগরিক সেবা দ্রæততর করতে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান মেয়র। উল্লেখ্য জব পোর্টাল তৈরিসহ চসিকের অটোমেশন কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির সচিব মো. আশরাফুল আমিন।
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নানামুখি কাজ চলছে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রধান প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো নগরীর সব জায়গাকে কাভার করছে না, তাই চসিক নিজস্ব উদ্যোগেও কাজ করছে। উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে বাদ পড়া অংশগুলোর জন্য চসিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
নগরীর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, “বর্তমান ব্যবস্থা অনেক পুরনো। আমরা বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে যাই, তারপর তা সরাসরি ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ট্রিটমেন্ট নেই, যা টেকসই সমাধান নয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কোরিয়ান, জাপানি ও ইউকে মডেলের বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মেয়র জানান, চসিক মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে বাকলিয়া এলাকায় মশার লার্ভা ধ্বংসকারী বিটিআই (ব্যাসিলাস থুরিঞ্জিয়েন্সিস ইসরায়েলেনসিস) ঔষধের পরীক্ষা করা হবে, কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে এটি পুরো নগরীতে ব্যবহার করা হবে।
সভায় চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে সিডিএ, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সিটি কর্পোরেশন সমন্বিতভাবে কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে আগামী এক মাসের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রগতি আসবে বলে আশা করি। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাল পুনরুদ্ধার ও পরিষ্কার করা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং চট্টগ্রামের খাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় কিছু প্রধান খাল পরিষ্কার করা হয়েছে, যা বর্ষার আগেই সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার জলাবদ্ধতার প্রধান চ্যালেঞ্জিং এলাকা বাকলিয়া ও বহদ্দারহাট। এই দুইটি এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় খালগুলোর বøক অপসারণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু খাল খুলে দেওয়া হয়েছে, এবং আরও কয়েকটি বøক অপসারণের জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।”
0Shares

নিউজ খুজুন